ইউসুফ জুলেখার প্রেম সত্য নাকি মিথ্যা? - তৌহিদ রাসেল





যখন হাই স্কুলে পড়ি তখন আড্ডা দেওয়ার সময় আমার একবন্ধু একটা কথা বলেছিল- 'প্রেম ভালবাসা সব ধর্মে আছে। খ্রিষ্টান ধর্মে আছে রোমিও জুলিয়েট, হিন্দু ধর্মে রাধা কৃষ্ণ, ইসলাম ধর্মে ইউসুফ জুলেখা'। আমিও তাই বিশ্বাস করে বসেছিলাম। কারণ তখন ধর্ম আর প্রেম ভালবাসা নিয়ে তো তেমন জানা ছিল না। বয়ঃসন্ধিকাল বয়স তাই প্রেমের হাওয়া জাগরণে, স্বপ্নে এবং কল্পনায় এসে ছুঁয়ে যেত। ইমদাদুল হক মিলনের মত কত লেখকের উপন্যাস যে তখন পড়া হতো তার কোনো ইয়ত্তা নেই। ইসলাম ধর্মে প্রেমের দৃষ্টান্ত হিসেবে ইউসুফ জুলেখার কথাই বিশ্বাস করতাম। কেননা, তখন একটা গান প্রায় শোনা যেত- 'কৃষ্ণ পক্ষ কালো পক্ষ'। সেই গানের লিরিক্সের একটা লাইন ছিল- 'প্রেম কইরাছেন ইউসুফ নবী, তার প্রেমে জুলেখা বিবিগো'। এই রকম আরেকটা গান তো এখনও পোলাপানের মুখেমুখে শোনা যায়- 'প্রেমের মরা জলে ডুবে না'।

আস্তে আস্তে এসব প্রেম ভালবাসার জট গুলি খুলতে শুরু করলো। কুরআনের তাফসির পড়ার পর এগুলো খোলাসা হলো। রোমিও জুলিয়েট এবং  রাধা কৃষ্ণ দের প্রেমের উদাহরণের সাথে কোনোভাবেই ইউসুফ জুলেখার ব্যাপারটা যায় না। আরো খোলাসা করে বলতে হলে সংক্ষিপ্তভাবে রোমিও জুলিয়েট, রাধা কৃষ্ণ এবং ইউসুফ জুলেখার ঘটনা বলা যেতে পারে।

ইতালির ভেরোনা ১৩শ শতাব্দীতে সম্রাট প্রথম বার্তোলোমিও-র শাসনাধীন ছিল। দুটি রাজনৈতিক গোষ্ঠীর দ্বন্দ্বে ভেরোনা তখন উত্তপ্ত। ভেরোনার বিবাদমান সেই দুটি গোষ্ঠীর মধ্যে একটি গোষ্ঠীর এক যুবকের সঙ্গে প্রণয়সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে অপর গোষ্ঠীর এক যুবতী। একটি যুদ্ধে সেই যুবকের মৃত্যু হলে মেয়েটিও শোকে আত্মহত্যা করে। মেয়েটির পরিবারের সকলে এই ঘটনায় এতটাই শোকাহত হয়ে পড়েন যে প্রথা ভেঙে চার্চের পবিত্র ভূমিতেই তাকে সমাহিত হয়। সাধারণত অপঘাতে মৃত ব্যক্তিদের চার্চের জমিতে সেই সময়ে সমাহিত করতে দেওয়া হত না।

এই ঘটনা লেখক লুইগি দা পোরতো তার একটি লেখাতে লিখেছিলেন। তার থেকে প্রভাবিত হয়ে এই ঘটনার উপর উপন্যাস লিখেন মাত্তিও বান্দেলো। মাত্তিও বান্দেলোর উপন্যাস থেকে প্রভাবিত হয়ে মহাকাব্যগ্রন্থ রচনা করেন অ্যালবার্ট ব্রুক। এই আলবার্ট ব্রুকের কাব্যগ্রন্থের উপর ভিত্তি করে আরো কাল্পনিক ঘটনা যোগ করে অতিরঞ্জিতভাবে নাটক লিখেন ইংরেজি সাহিত্যের কিংবদন্তী শেক্সপিয়র।

রোমিও জুলিয়েট দুজনেই খ্রিষ্টান ধর্মের অনুসারী হলেও এই ঘটনাকে খ্রিষ্টান ধর্মের ধর্মীয় প্রেম কাহিনীর ভিতরে ফেলা যাবে না। কারণ খ্রিষ্টান ধর্মীয় গ্রন্থে এই ঘটনা নেই। এই ঘটনা ঘটে মূলত যিশুখ্রিস্টের ১৪ শত বছর পরে ঘটে। এটি সাধারণ প্রেম কাহিনীর ঘটনার ভিতরে ফেলা যায়। ধর্মীয় ঘটনা হিসেবে এটি টেনে আনা যাবে না।

হিন্দু ধর্মের রাধা কৃষ্ণের ঘটনা সকল হিন্দুরা তো জানেই পাশাপাশি ভারতীয় উপমহাদেশে মুসলিমসহ অন্যান্য ধর্মের মানুষেরাও জানে। বৈষ্ণবপদাবলী ও শ্রীকৃষ্ণকীর্তন থেকে জানা যায় যে, পৃথিবীতে রাধার বিয়ে হয়েছিলো আয়ান ঘোষ নামের এক ব্যক্তির সাথে। এই আয়ান ঘোষ ছিলো আবার নপুংসক এবং ছিলো কৃষ্ণের মামা। কৃষ্ণ জন্মের পর ঘোষ পরিবারে লালিত পালিত হয়েছিলো। এই সূত্রে রাধা ও কৃষ্ণের সম্পর্ক আবার মামী ও ভাগিনা। ধীরে ধীরে রাধার সাথে কৃষ্ণের প্রণয়সম্পর্ক গড়ে উঠে অর্থাৎ মামীর সাথে ভাগনার প্রেম। এরপর ইত্যাদি ইত্যাদি অনেক কিছু।

তবে মূল মহাভারত, চার বেদ, ১০৮টি উপনিষদ, গীতার ১৮টি অধ্যায়ের ৭০০ শ্লোক এবং বিষ্ণু পুরানে কোথাও রাধার কোনো উল্লেখ নেই। কৃষ্ণের সাথে রাধার প্রেম কাহিনী জুড়ে দেওয়া হয় বৈষ্ণবপদাবলী ও শ্রীকৃষ্ণকীর্তন গ্রন্থে। এই গ্রন্থ দুটি রচিত হয়েছিল বাংলা ইতিহাসের মধ্যযুগে। বৈষ্ণবপদাবলী ও শ্রীকৃষ্ণকীর্তন হিন্দু ধর্মের উপরে কাহিনী লেখা হলেও এটি মূলত হিন্দু ধর্মের ঐশ্বরিক গ্রন্থ না। রাধা ও কৃষ্ণের প্রেম কাহিনী নিয়ে ধর্মীয় বিশ্লেষকদের মাঝে মতভেদ রয়েছে। যাইহোক, রাধা কৃষ্ণকে নিয়ে প্রচলিত একটি কথা আছ, '‍কৃষ্ণ করলে লীলা, আর আমরা করলে বিলা'।

রোমিও জুলিয়েট খ্রিষ্টান ধর্মের ধর্মীয় কোনো চরিত্র না, কৃষ্ণ হিন্দু ধর্মের একজন দেবতা হলেও রাধা কৃষ্ণের প্রেমের কাহিনী হিন্দু ধর্মের ঐশ্বরিক কোনো গ্রন্থে নেই। ইউসুফ জুলেখা চরিত্র দুটি ইসলাম ধর্মের ঐশ্বরিক গ্রন্থ আল-কুরআনে আছে। তবে রোমিও জুলিয়েট এবং রাধা কৃষ্ণের প্রেমের সাথে উদাহরণ হিসেবে ইসলাম ধর্মের ইউসুফ জুলেখাকে টেনে আনা যাবে না। কারণ রোমিও জুলিয়েট ও রাধা কৃষ্ণের প্রেম কাহিনী হলেও ইউসুফ জুলেখার ঘটনা ছিল ভিন্ন। কি রকম ভিন্ন ছিল তা জানলে কখনো কেউ প্রেমের উদাহরণ হিসেবে আর ইউসুফ জুলেখাকে টানবে না।

একজন মুসলিম হিসেবে আমরা নবীর সম্মানার্থে নামের সাথে আলাইহিসালাম বলি। তাই ইউসুফ না বলে ইউসুফ (আঃ) বলাই শ্রেয়। ইউসুফ (আঃ) ও  জুলেখার ঘটনা যেখানে বর্ণিত আছে সেই আসল জায়াগায় চলে যেতে হবে। যদি ইউসুফ (আঃ) এবং জুলেখা সম্পর্কে জানার আগ্রহ থাকে তাহলে চলুন কুরআনের সূরা ইউসুফের কিছু অংশের শুধুমাত্র বাংলা অনুবাদ পড়ে আসি।

শুরু করছি আল্লাহর নামে যিনি পরম করুণাময়, অতি দয়ালু।

1. আলিফ-লা-ম-রা; এগুলো সুস্পষ্ট গ্রন্থের আয়াত।

2. আমি একে আরবী ভাষায় কোরআন রূপে অবতীর্ণ করেছি, যাতে তোমরা বুঝতে পার।

3. আমি তোমার নিকট উত্তম কাহিনী বর্ণনা করেছি, যেমতে আমি এ কোরআন তোমার নিকট অবতীর্ণ করেছি। তুমি এর আগে অবশ্যই এ ব্যাপারে অনবহিতদের অন্তর্ভূক্ত ছিলে।

4. যখন ইউসুফ পিতাকে বললঃ বাবা, আমি স্বপ্নে দেখেছি এগারটি নক্ষত্রকে। সুর্যকে এবং চন্দ্রকে। আমি তাদেরকে আমার উদ্দেশে সেজদা করতে দেখেছি।

5. তিনি বললেনঃ বৎস, তোমার ভাইদের সামনে এ স্বপ্ন বর্ণনা করো না। তাহলে তারা তোমার বিরুদ্ধে চক্রান্ত করবে। নিশ্চয় শয়তান মানুষের প্রকাশ্য শত্রু।

6. এমনিভাবে তোমার পালনকর্তা তোমাকে মনোনীত করবেন এবং তোমাকে বাণীসমূহের নিগুঢ় তত্ত্ব শিক্ষা দেবেন এবং পূর্ণ করবেন স্বীয় অনুগ্রহ তোমার প্রতি ও ইয়াকুব পরিবার-পরিজনের প্রতি; যেমন ইতিপূর্বে তোমার পিতৃপুরুষ ইব্রাহীম ও ইসহাকের প্রতি পূর্ণ করেছেন। নিশ্চয় তোমার পালনকর্তা অত্যন্ত জ্ঞানী, প্রজ্ঞাময়।

7. অবশ্য ইউসুফ ও তাঁর ভাইদের কাহিনীতে জিজ্ঞাসুদের জন্যে নিদর্শনাবলী রয়েছে।
8. যখন তারা বললঃ অবশ্যই ইউসুফ ও তাঁর ভাই আমাদের পিতার কাছে আমাদের চাইতে অধিক প্রিয় অথচ আমরা একটা সংহত শক্তি বিশেষ। নিশ্চয় আমাদের পিতা স্পষ্ট ভ্রান্তিতে রয়েছেন।

9. হত্যা কর ইউসুফকে কিংবা ফেলে আস তাকে অন্য কোন স্থানে। এতে শুধু তোমাদের প্রতিই তোমাদের পিতার মনোযোগ নিবিষ্ট হবে এবং এরপর তোমরা যোগ্য বিবেচিত হয়ে থাকবে।

10. তাদের মধ্য থেকে একজন বলল, তোমরা ইউসুফ কে হত্যা করো না, বরং ফেলে দাও তাকে অন্ধকূপে যাতে কোন পথিক তাকে উঠিয়ে নিয়ে যায়, যদি তোমাদের কিছু করতেই হয়।

11. তারা বললঃ বাবা ব্যাপার কি! আপনি ইউসুফের ব্যাপারে আমাদেরকে বিশ্বাস করেন না ? আমরা তো তার হিতাকাংখী।

12.  আগামীকাল তাকে আমাদের সাথে প্রেরণ করুন-তৃপ্তিসহ খাবে এবং খেলাধুলা করবে এবং আমরা অবশ্যই তার রক্ষণাবেক্ষন করব।

13. তিনি বললেনঃ আমার দুশ্চিন্তা হয় যে, তোমরা তাকে নিয়ে যাবে এবং আমি আশঙ্কা করি যে, বাঘ তাঁকে খেয়ে ফেলবে এবং তোমরা তার দিক থেকে গাফেল থাকবে।

14. তারা বললঃ আমরা একটি ভারী দল থাকা সত্ত্বেও যদি বাঘ তাকে খেয়ে ফেলে, তবে আমরা সবই হারালাম।

15. অতঃপর তারা যখন তাকে নিয়ে চলল এবং অন্ধকূপে নিক্ষেপ করতে একমত হল এবং আমি তাকে ইঙ্গিত করলাম যে, তুমি তাদেরকে তাদের এ কাজের কথা বলবে এমতাবস্থায় যে, তারা তোমাকে চিনবে না।

16. তারা রাতের বেলায় কাঁদতে কাঁদতে পিতার কাছে এল।

17. তারা বললঃ বাবা, আমরা দৌড় প্রতিযোগিতা করতে গিয়েছিলাম এবং ইউসুফকে আসবাব-পত্রের কাছে রেখে গিয়েছিলাম। অতঃপর তাকে বাঘে খেয়ে ফেলেছে। আপনি তো আমাদেরকে বিশ্বাস করবেন না, যদিও আমরা সত্যবাদী।

18. এবং তারা তার জামায় কৃত্রিম রক্ত লাগিয়ে আনল। তাদের পিতা বললেনঃ এটা কখনই নয়; বরং তোমাদের মন তোমাদেরকে একটা কথা সাজিয়ে দিয়েছে। সুতরাং এখন ছবর করাই শ্রেয়। তোমরা যা বর্ণনা করছ, সে বিষয়ে একমাত্র আল্লাহই আমার সাহায্য স্থল।

19. এবং একটি কাফেলা এল। অতঃপর তাদের পানি সংগ্রাহককে প্রেরণ করল। সে বালতি ফেলল। সে বললঃ কি আনন্দের কথা। এ তো একটি কিশোর! তারা তাকে পন্যদ্রব্য গণ্য করে গোপন করে ফেলল। আল্লাহ খুব জানেন যা কিছু তারা করেছিল।

20. ওরা তাকে কম মূল্যে বিক্রি করে দিল গনাগুণতি কয়েক দেরহাম এবং তাঁর ব্যাপারে নিরাসক্ত ছিল।

21. মিসরে যে ব্যক্তি তাকে ক্রয় করল, সে তার স্ত্রীকে বললঃ একে সম্মানে রাখ। সম্ভবতঃ সে আমাদের কাছে আসবে অথবা আমরা তাকে পুত্ররূপে গ্রহণ করে নেব। এমনিভাবে আমি ইউসুফকে এদেশে প্রতিষ্ঠিত করলাম এবং এ জন্যে যে তাকে বাক্যাদির পূর্ণ মর্ম অনুধাবনের পদ্ধতি বিষয়ে শিক্ষা দেই। আল্লাহ নিজ কাজে প্রবল থাকেন, কিন্তু অধিকাংশ লোক তা জানে না।

22. যখন সে পূর্ণ যৌবনে পৌছে গেল, তখন তাকে প্রজ্ঞা ও ব্যুৎপত্তি দান করলাম। এমননিভাবে আমি সৎকর্মপরায়ণদেরকে প্রতিদান দেই।

23. আর সে যে মহিলার ঘরে ছিল, ঐ মহিলা তাকে ফুসলাতে লাগল এবং দরজাসমূহ বন্ধ করে দিল। সে মহিলা বললঃ শুন! তোমাকে বলছি, এদিকে আস, সে বললঃ আল্লাহ রক্ষা করুন; তোমার স্বামী আমার মালিক। তিনি আমাকে সযত্নে থাকতে দিয়েছেন। নিশ্চয় সীমা লংঘনকারীগণ সফল হয় না।

24. নিশ্চয় মহিলা তার বিষয়ে চিন্তা করেছিল এবং সেও মহিলার বিষয়ে চিন্তা করত, যদি না সে স্বীয় পালনকর্তার মহিমা অবলোকন করত। এমনিভাবে হয়েছে, যাতে আমি তার কাছ থেকে মন্দ বিষয় ও নিলজ্জ বিষয় সরিয়ে দেই। নিশ্চয় সে আমার মনোনীত বান্দাদের একজন।

25. তারা উভয়ে ছুটে দরজার দিকে গেল এবং মহিলা ইউসুফের জামা পিছন দিক থেকে ছিঁড়ে ফেলল। উভয়ে মহিলার স্বামীকে দরজার কাছে পেল। মহিলা বললঃ যে ব্যক্তি তোমার পরিজনের সাথে কুকর্মের ইচ্ছা করে, তাকে কারাগারে পাঠানো অথবা অন্য কোন যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি দেয়া ছাড়া তার আর কি শাস্তি হতে পারে?

26. ইউসুফ (আঃ) বললেন, সেই আমাকে আত্মসংবরণ না করতে ফুসলিয়েছে। মহিলার পরিবারে জনৈক সাক্ষী দিল যে, যদি তার জামা সামনের দিক থেকে ছিন্ন থাকে, তবে মহিলা সত্যবাদিনী এবং সে মিথ্যাবাদি।

27. এবং যদি তার জামা পেছনের দিক থেকে ছিন্ন থাকে, তবে মহিলা মিথ্যাবাদিনী এবং সে সত্যবাদী।

28. অতঃপর গৃহস্বামী যখন দেখল যে, তার জামা পেছন দিক থেকে ছিন্ন, তখন সে বলল, নিশ্চয় এটা তোমাদের ছলনা। নিঃসন্দেহে তোমাদের ছলনা খুবই মারাত্নক।

29. ইউসুফ এ প্রসঙ্গ ছাড়! আর হে নারী, এ পাপের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা কর নিঃসন্দেহে তুমি-ই পাপাচারিনী।

30. নগরে মহিলারা বলাবলি করতে লাগল যে, আযীযের স্ত্রী স্বীয় গোলামকে কুমতলব চরিতার্থ করার জন্য ফুসলায়। সে তার প্রেমে উম্মত্ত হয়ে গেছে। আমরা তো তাকে প্রকাশ্য ভ্রান্তিতে দেখতে পাচ্ছি।

31. যখন সে তাদের চক্রান্ত শুনল, তখন তাদেরকে ডেকে পাঠাল এবং তাদের জন্যে একটি ভোজ সভার আয়োজন করল। সে তাদের প্রত্যেককে একটি ছুরি দিয়ে বললঃ ইউসুফ এদের সামনে চলে এস। যখন তারা তাকে দেখল, হতভম্ব হয়ে গেল এবং আপন হাত কেটে ফেলল। তারা বললঃ কখনই নয় এ ব্যক্তি মানব নয়। এ তো কোন মহান ফেরেশতা।

32. মহিলা বললঃ এ ঐ ব্যক্তি, যার জন্যে তোমরা আমাকে ভৎর্সনা করছিলে। আমি ওরই মন জয় করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু সে নিজেকে নিবৃত্ত রেখেছে। আর আমি যা আদেশ দেই, সে যদি তা না করে, তবে অবশ্যই সে কারাগারে প্রেরিত হবে এবং লাঞ্চিত হবে।

33. ইউসুফ বললঃ হে পালনকর্তা তারা আমাকে যে কাজের দিকে আহবান করে, তার চাইতে আমি কারাগারই পছন্দ করি। যদি আপনি তাদের চক্রান্ত আমার উপর থেকে প্রতিহত না করেন, তবে আমি তাদের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়ব এবং অজ্ঞদের অন্তর্ভূক্ত হয়ে যাব।

34. অতঃপর তার পালনকর্তা তার দোয়া কবুল করে নিলেন। অতঃপর তাদের চক্রান্ত প্রতিহত করলেন। নিশ্চয় তিনি সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞ।

35. অতঃপর এসব নিদর্শন দেখার পর তারা তাকে কিছুদিন কারাগারে রাখা সমীচীন মনে করল।

সুরা ইউসুফে নবী ইউসুফ (আঃ) ও জোলেখার ঘটনা উল্লেখসহ বিভিন্ন প্রেক্ষাপটে আরো কিছু সূরাতে আরো কিছু আয়াত আছে ইউসুফ (আঃ) ও জোলেখাকে নিয়ে। এখন কথা হলো কুরআনে এত স্পষ্ট করে ঘটনা উল্লেখ থাকা সত্ত্বেও কেন তাদের নিয়ে বিভিন্ন উপন্যাস, কাব্যগ্রন্থ ও গানে অতিরঞ্জিত করে উপস্থাপন করা হয়েছে? মূলত ইউসুফ (আঃ) এর ঘটনা খ্রিস্টান ধর্মের বাইবেলে আছে। আর বাইবেল সেই ঐশ্বরিক গ্রন্থের আসল অবস্থায় না রেখে অনেকটা বিকৃত করা হয়েছে। ফলে অনেক কিছুই বিকৃত হয়ে অতিরঞ্জিতভাবে স্থান পেয়েছে।

মধ্যযুগে পার্সিয়ান ও বাংলার কাব্যগ্রন্থ-পুঁথিসাহিত্যে ইউসুফ (আঃ) ও জুলেখার ঘটনা স্থান পেতে থাকে। পাঠকদের নিকট ইউসুফ (আঃ) ও জোলেখার ঘটনাকে আকর্ষণীয় ভাবে তোলে ধরার জন্য তৎকালীন কবি ও লেখকরা বাইবেল ও কুরআনের ঘটনার সাথে লৌকিক কথা যোগ করে অতিরঞ্জিতভাবে সাহিত্যে এই ঘটনা উপস্থাপন করতে থাকে। ফলে অনেকক্ষেত্রে কিছু ঘটনা কুরআনের সাথে সাংঘর্ষিক হয়ে যায়। এই জন্য একজন মুসলিমের উচিৎ কোনো নবী বা রাসুল সমন্ধে কোন ঘটনা শুনলে ততটুকু গ্রহণ করা উচিৎ যতটুকু কুরআন এবং সহীহ হাদিসে আছে।

রাসুল (সাঃ) বিদায় হজ্বের ভাষণে বলেছিলেন-
'আমার উম্মতের ভিতর যারা কুরআন এবং হাদিস আঁকড়ে ধরবে তারা কখনো পথভ্রষ্ট হবে না।'

Comments

  1. নতুন কিছু জানতে পারলাম। ধন্যবাদ।

    ReplyDelete
  2. ei rokom likha aro likhben

    ReplyDelete
  3. এ বিষয় নিয়ে অনেকের মাঝে অনেক বিভ্রান্তি আছে।

    ReplyDelete

Post a Comment

Popular posts from this blog

সমকাম বা হোমোসেক্সুয়াল

বিভিন্ন ধর্মে নারীর পর্দা- তৌহিদ রাসেল

এক নজরে দোহার উপজেলা