নালন্দা এবং বখতিয়ার বিতর্ক - তৌহিদ রাসেল




চর্যাপদে পড়েছিলাম 'আপনা মাংসে হরিণা বৈরি'। এর তর্জমা ছিল নিজের মাংসের কারণেই হরিণের শত্রু তৈরি হয়। ঐটার অর্থ ছিল রূপক। বাস্তবিক অর্থ ধরতে গেলে বলতে হবে 'ধন-সম্পদ, জ্ঞান-গরিমা, রূপ-সৌন্দর্যের কারণে মানুষের শত্রু তৈরি হয়'। পত্রিকার পাতা খুললেই দেখা যায় ব্যবসায়ী খুন, বুদ্ধিজীবী-রাজনীতিবিদ গুম এবং নারীরা ধর্ষণের শিকার। চর্যাপদ বাংলা ভাষার প্রথম প্রাচীন নিদর্শন হলেও তা পাওয়া গিয়েছিল নেপালে। প্রশ্ন থাকতে পারে যে বাংলা ভাষার নিদর্শন নেপালে কেন পাওয়া গেল? নেপালে চর্যাপদ গেল কিভাবে? সবার জেনে রাখা উচিৎ চর্যাপদ ছিল বৌদ্ধ সহজিয়া কবিদের লিখা একধরণের গান বা কবিতা। প্রাচীন আমলে বঙ্গ অঞ্চলে ক্ষমতায় সবচেয়ে বেশি সময় ধরে ছিল 'পাল বংশ'। পালরা ছিল বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী। তাদের আমলেই এই চর্যাপদ লিখা হয়। পালদের ক্ষমতাচ্যুত করে ক্ষমতায় আসে সেন বংশ। সেনরা ছিল হিন্দু ধর্মাবলম্বী। তারা বৌদ্ধদের উপর প্রচুর পরিমানে নির্যাতন চালায়। তখন অনেক বৌদ্ধ বঙ্গ থেকে অন্য অঞ্চলে চলে যায়। বৌদ্ধ সহজিয়াদের একটি অংশ যায় নেপালে। চর্যাপদ বিশারদগণ বলেছে- 'তারা সাথে করে চর্যাপদের পাণ্ডুলিপি নেপালে নিয়ে যায়'। সেন রাজারা হিন্দুদের মাঝে শ্রেণিভেদ তৈরি করে। শুদ্র এবং বৈশ্যদের তারা মানুষ মনে করতো না, তাদের অপবিত্র হিসেবে গণ্য করা হতো। হিন্দু কেউ এই লেখা পড়ে থাকলে মনঃক্ষুণ্ণ হবেন না। এটা তৎকালীন ইতিহাস থেকে নেওয়া।

এটা মূলত ধর্মের দোষ ছিল না, এটা রাজার দোষ। নিজেদের স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্যই যুগ যুগ ধরে অসৎ রাজারা ধর্মকে ব্যবহার করেছে। তবে সৎ রাজাও ছিল যারা ধর্মকে ব্যবহার করেছে সঠিক পন্থায়। ধর্মের অনুশাসন বাস্তবায়ন করে দশ ও দেশের কল্যাণ বয়ে এনেছে। সেন বংশ ক্ষমতায় আসে ১০৯৫ সালে বা মতান্তরে ১০৯৭ সালে। বৌদ্ধ ধর্মের অনুসারী পাল রাজাদের বিদায় এবং হিন্দুধর্মের অনুসারী সেন রাজাদের আগমন হয়। ইতিহাস ঘাটলে দেখা যায় যে পরাজিতদের উপর নানান সময় নানা রকম ভাবে অত্যাচার করা হয়। বিশেষ করে ধর্মের উপর বেশি আঘাত করা হয়। ধর্মান্তরিত করার জন্য বিভিন্ন নিয়ম জারি করে অত্যাচার করা হয়। মুসলমানগণ বিজয়ীর বেশে এ দেশে আগমন করলেও বাংলাকে ভালোবেসেছিলেন মনেপ্রাণে। এ দেশকে স্থায়ী আবাসভূমি হিসেবে গ্রহণ করেছেন। এ দেশের উল্লেখযোগ্য অমুসলমান জনগোষ্ঠীর সাথে মিলে-মিশে বসবাস করেছেন। শাসক জাতি হিসেবে কখনো তারা শাসিতদের উপর অন্যায়-অবিচার, জুলুম-নিষ্পেষণ করেনি। মুসলমানদের উদার নীতি, আদল-ইনসাফ ও ন্যায় বিচারের কারণে উল্লেখযোগ্য অমুসলমান ইসলাম গ্রহণ করে। ইখতিয়ার উদ্দিন বিন বখতিয়ার খিলজি ইচ্ছে করলে রাজা লক্ষণ সেনের পশ্চাদানুসরণ করে তাকে পরাজিত বা হত্যা করতে পারতেন, কিন্তু মুসলিম শাসকরা যে অনর্থক রক্তপাত করতেন না, বখতিয়ার খিলজিই তার উত্তম উদাহরণ। এ প্রসঙ্গে যদুনাথ সরকার বাংলার ইতিহাসে লিখেছেন- 'তিনি রক্তপিপাসু ছিলেন না। নরহত্যা ও প্রজাপীড়ন তিনি পছন্দ করতেন না'।

আরেকটা বিষয় উল্লেখ করা যেতে পারে। হাজার বছর আগে বাঙ্গালি জাতির মুখের ভাষা ‘বাংলা’কে কেড়ে নিয়েছিল দক্ষিণ ভারত থেকে আগত সেন রাজারা। সেন রাজাদের হিন্দু পণ্ডিতরা নির্দেশ জারি করেছিল, 'যারা বাংলা ভাষা বলবে ও শুনবে তারা রৌরব নামক নরকে যাবে।' ওই সময় তুর্কি বংশোদ্ভূত ইখতিয়ার উদ্দিন মুহম্মদ বখতিয়ার খিলজি নির্যাতিত বাঙালিদের মুক্ত করতে এগিয়ে আসেন এবং ১২০৪ খ্রিষ্টাব্দে মাত্র ১৮ জন ঘোড়সওয়ারি নিয়ে সেন রাজাকে পরাজিত করে বাংলাকে স্বাধীন করেন। বক্তারা বলেন, ইখতিয়ার উদ্দিন মুহম্মদ বখতিয়ার খিলজির বাংলা বিজয়ের মাধ্যম সেই দিন শুধু ভূমির বিজয় হয়নি, সঙ্গে মুক্ত হয়েছিল বাঙ্গালিদের মুখের ভাষা ‘বাংলা’। ভাষাবিদ দীনেশ চন্দ্র সেন বলেন, 'মুসলমান সম্রাটরা বর্তমান বঙ্গ-সাহিত্যের জন্মদাতা বললে অত্যুক্তি হয় না। বঙ্গ-সাহিত্য মুসলমানদেরই সৃষ্ট, বঙ্গ-ভাষা বাঙালি মুসলমানের মাতৃভাষা।' অধ্যাপক ও গবেষক মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান বলেন, 'যদি বাংলায় মুসলিম বিজয় ত্বরান্বিত না হতো এবং এ দেশে আরও কয়েক শতকের জন্য পূ্র্বের শাসন অব্যাহত থাকত, তবে বাংলা ভাষা বিলুপ্ত হয়ে যেত এবং অবহেলিত ও বিস্মৃত-প্রায় হয়ে অতীতের গর্ভে নিমজ্জিত হতো।' মধ্যযুগে মুসলিম শাসকদের রাজকীয় পৃষ্ঠপোষকতায় বাংলা ভাষার যে সাহিত্যচর্চা শুরু হয়, তার মাধ্যমে বাংলা ভাষা একটি পরিপূর্ণ ভাষা হিসেবে আত্মপ্রকাশের যোগ্যতা অর্জন করে। বাংলা ভাষাকে কলুষিত করার চেষ্টা যুগে যুগে আরও হয়। ১৮শ’ সনে ব্রিটিশরা কলকাতায় ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ প্রতিষ্ঠা করে বাংলা ভাষার আরবি ও ফারসি শব্দ বাদ দিয়ে সংস্কৃত শব্দ প্রবেশের উদ্দেশ্যে সাহিত্যচর্চা শুরু করে। তারা দেখাতে চায়—বাংলা ভাষার সঙ্গে মুসলমানদের কোনো সম্পর্ক নেই। মুসলিমদের হেয় প্রতিপন্ন করতে প্রচার করা হয়, বাংলা ভাষায় প্রথম কুরআন মাজিদ অনুবাদ নাকি গিরিশ চন্দ্র সেন করেছেন। অথচ ১৮৮৬ খ্রিষ্টাব্দে গিরিশ চন্দ্র সেনের অনুবাদের বহু আগে ১৮০৮ খ্রিষ্টাব্দে বাংলা ভাষায় কুরআন মাজিদের আংশিক অনুবাদ করেন মাওলানা আমিরুদ্দিন বসুনিয়া। এরপর ১৮৩৬ খ্রিষ্টাব্দে মৌলবি নাঈমুদ্দিন পূরো কুরআনের বাংলা অনুবাদ সম্পন্ন করেন। অথচ এ ইতিহাস প্রচার করা হয় না। যাইহোক, ভারতের কিছু পাতি লেখকদের বড় ধরণের একটি অভিযোগ হলো 'বখতিয়ার নালন্দা ধ্বংস করে এবং সকল বই পুস্তক পুড়িয়ে দেয়'। সত্যি কি বখতিয়ার নালন্দা ধ্বংস করেছিল নাকি নালন্দা ধ্বংসের পিছনে অন্যকোন বড় গোপন ঘটনা লুকিয়ে ফেলা হচ্ছে? ইতিহাসের পাতা থেকে তাহলে আসল সত্য জেনে নেওয়া যাক। প্রাচীন আমলে ইউরোপ এবং এশিয়ায় আতঙ্কের অন্যতম নাম ছিল হুন। হুনরা যেখানে গেছে ভেংগে জ্বালিয়ে পুড়ে সব তছনছ করে দিছে। রক্তের বন্যা বয়ে গেছে বিভিন্ন রাজ্যে। এই হুনরা বাংলায় এসে প্রথম পর্যায় নালন্দা আক্রমণ করে। তাহলে নালন্দার কি অবস্থা হয়েছিল তা কল্পনা করলেই বুঝা যায়। নালন্দা ধ্বংসের ২য় পর্যায় শুরু হয় রাজা হর্ষবর্ধনের সময়। রাজা শশাঙ্ক এবং হর্ষবর্ধনের মধ্যকার দ্বন্দ্ব এতটাই তিক্ত হয়ে উঠেছিল যে, ব্রাহ্মণরা হর্ষবর্ধনকে হত্যার ষড়যন্ত্র করে। আসলে তাঁদের মধ্যকার ঐ দ্বন্দ্ব নির্দেশ করে ঐ সময়কার বৌদ্ধ ও ব্রাহ্মণদের মধ্যে রাজনৈতিক ও ক্ষমতার লড়াই এবং এর ফলাফল হচ্ছে উত্তর ভারত থেকে বৌদ্ধদের গণ বিতারন ও গণহত্যা। চৈনিক পরিব্রাজক হিউয়েন সাঙয়ের সফরনামায় শশাঙ্কের ধ্বংসযজ্ঞের ইতিহাস ফুটে উঠেছে। মুর্শিদাবাদের শাসক শশাঙ্ক রাজা হর্ষবর্ধনের সঙ্গে ধর্মবিশ্বাস বিরোধে লিপ্ত হন। যার ফলে রাজা শশাঙ্ক যখন মগধে প্রবেশ করেন তখন বৌদ্ধদের পবিত্র স্থানগুলো ধ্বংস করেন। বুদ্ধের পদচিহ্নকে খণ্ড-বিখণ্ড করেন। নালন্দা ধ্বংসের মূল কার্যক্রম সংগঠিত হয় হর্ষবর্ধনের মৃত্যুর পর। এক ব্রাহ্মণ গুপ্ত ঘাতক রাজা হর্ষবর্ধনকে হত্যা করে। হর্ষবর্ধনের পর অর্জুন ক্ষমতায় আসে। অর্জুন হিন্দু ধর্মাবলম্বী ছিলো। ডি.ডি কসাম্বি তার 'প্রাচীন ভারতের সংস্কৃতি ও সভ্যতা বইয়ে উল্লেখ করেছেন, 'অর্জুন সিংহাসনে আরোহন করার পর একদল ব্রাহ্মণ দুর্বিত্তের নেতৃত্বে নালন্দায় আক্রমণ হয় এবং সেটা আগুনে পুড়িয়ে ফেলা হয়।' দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান প্রফেসর 'DN JHA' অনেক গুলি তিব্বতি রেফারেন্স দিয়ে তিনি লিখেন যে, 'ব্রাহ্মণ্যবাদ এবং বৌদ্ধদের মধ্যকার চলতে থাকা আঘাত-প্রতিঘাতে নালন্দা ধ্বংস হয়।' নালন্দা ধ্বংস প্রায় ৮০% হয়ে যায় বখতিয়ার বাংলায় প্রবেশ করার আগেই। কিন্তু মুসলিম সেনা বখতিয়ার নালন্দা না গিয়েও নালন্দা ধ্বংসের অপরাধী হয়ে গেলেন কিছু পাতি লেখকের বইয়ের পাতায়। বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সুখময় মুখোপাধ্যায় তার লেখা 'বাংলার ইতিহাস' গ্রন্থে বলেছেন- 'ঐতিহাসিক মিনহাজের বর্ণনায় বখতিয়ারের বিহার ও নদীয়া জয়ের কাহিনী পাওয়া যায়। নালন্দা অভিযান, নালন্দা জয়, নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয় ধ্বংসের কোনো ঘটনা বা তথ্য বর্ণিত হয়নি'। বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠ ইতিহাসবিদ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি এবং বিখ্যাত ইতিহাসবিদ ড. আবদুল করিমও তার লেখায় সহমত পোষন করেছেন। তাছাড়া শ্রী রমেশচন্দ্র মজুমদার তার ‘বাংলাদেশের ইতিহাস’ বইয়ে বখতিয়ার সংক্রান্ত বিভিন্ন ঐতিহাসিক গ্রন্থের তথ্যাবলির বিশদ ব্যাখ্যা করেছেন। কিন্তু কোনো ইতিহাস গ্রন্থের কোথাও তিনি বখতিয়ারের নালন্দা অভিযানের সত্যতা খোঁজে পান নি। ইন্ডিয়ান কিছু পাতি লেখকের বইয়ের পাতায় দেখা যায় তারা কোনো অথেনটিক সোর্স ছাড়াই মুসলিম শাসকদের দোষারোপ করেছে। তবে হ্যা সব শাসক দুধে ধোয়া তুলসিপাতা ছিল না। তবে সেটা খুবই নগণ্য। অধিকাংশ মুসলিম শাসক অমুসলিমদের প্রতি ছিল দয়ালু এবং হৃদয়বান। যদি তা নাই হতো তাহলে মাত্র হাতে গোনা কিছু মুসলিম জনগোষ্ঠি তৎকালীন ইন্ডিয়াতে টিকে থাকতে পারতো না। আর পারতো না মুঘলরা বিশাল সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করতে। মুঘল সম্রাট আওরঙ্গজেব মন্দির নির্মাণে অর্থ অনুদান করেতেন। তার আমলে তার পূর্বসূরীদের তুলনায় প্রশাসনে মুঘল প্রশাসনের সর্বোচ্চ সংখ্যক হিন্দু কর্মচারী নিয়োগ করা হয়েছিল। সেই আওরঙ্গজেবের বিরুদ্ধেও অনেক হিন্দু পাতি লেখক সমালোচনামূলক গ্রন্থ রচনা করেছে। নালন্দায় ফিরে আসা যাক। বখতিয়ারের মাধ্যমে নালন্দা ধ্বংস হয়েছে এমন কোনো ডকুমেন্ট তৎকালীন কোনো লেখকের বইয়ে পাওয়া যায়নি।মিনহাজ সিরাজ বাংলায় আসেন বখতিয়ারেরও প্রায় ৪০ বছর পর। মিনহাজ সিরাজের কথাও যদি ধরেন তার বইতেও নালন্দার কথা নেই। কিন্তু কিছু পাতি লেখক একচেটিয়াভাবে চোখ বুঝে বখতিয়ারকে দোষারোপ করে যায়। তারা ভারত এবং বাংলাদেশের বিখ্যাত ইতিহাসবিদদের চেয়েও বেশি বুঝে। আচ্ছা বখতিয়ারের যদি নালন্দা ধ্বংসই করতো তাহলে সেটা তারও ১০০ বছর পর পর্যন্ত কিভাবে শিক্ষাকার্যক্রম চালিয়ে গিয়েছিল! বাংলায় মুসলিম শাসকরা ক্ষমতায় আসার পর বাংলার বিভিন্ন তীর্থস্থান এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সংস্কার করে। তবে বখতিয়ার খিলজির ১০০ বছর পরে এসে নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম আর তেমন চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়নি। বৌদ্ধ জনগোষ্ঠীর জনসংখ্যা কমে যাওয়ায় এবং হুন, শশাঙ্ক ও সেনদের কারণে নালন্দার ৮০% ধ্বংস হয়ে যায়। আর এভাবেই একসময় ছাত্রসংকট এবং পাঠদানের অভাব দেখা দিলে ধীরে ধীরে নালন্দা বন্ধ হয়ে যায়। জেনে রাখা ভাল নালন্দায় বৌদ্ধ ধর্মের ছাত্ররা পড়শুনা করতো। প্রশ্ন থেকে যেতে পারে যে প্রাচীনকালে বাংলায় বৌদ্ধ যে পরিমান ছিল মধ্যযুগে এসে তা এত কমে গেল কিভাবে? বাংলায় বৌদ্ধ জনগোষ্ঠী কমে যাওয়ার কারণ প্রধানত দুটি। প্রথমত, সেন রাজবংশ ক্ষমতায় আসার পর বৌদ্ধরা এত পরিমাণ অত্যাচারিত হয় যে তাদের অধিকাংশই বাংলা এবং ভারত ছেড়ে পার্শ্ববর্তী অন্যান্য দেশে পারি জমায়। দ্বিতীয়ত,. মুসলিমরা ক্ষমতায় আসার পর বাংলার অধিকাংশ হিন্দু ও বৌদ্ধ ধীরে ধীরে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করতে থাকে। ফলে এই দু'টি কারণে মধ্যযুগে এসে বৌদ্ধ জনগোষ্ঠীর সংখ্যা কমে যায়। এই ভারতবর্ষে মুসলিমদের আগের ইতিহাস ক্রমানুসারে লিখিতভাবে পাওয়া তেমন যায়নি। মুসলিমদের আগমনের পর থেকেই ভারতবর্ষের লিখিত ইতিহাস আছে। মুসলিম শাসকরা সাহিত্যচর্চা করতেন। মুসলিমরাই ইউরোপ এবং এশিয়াতে প্রথম আধুনিক পদ্ধতিতে শিক্ষাব্যবস্থা চালু করে। এইজন্য স্পেনের কর্ডোভাকে বলা হতো 'The light house of Europe' অর্থাৎ ইউরোপের বাতিঘর। বাংলা সাহিত্য অথবা ইতিহাসের ছাত্র যারা তারা ভাল করেই জানে যে ভারত এবং বাংলার মুসলিম শাসকরা অনেক হিন্দু লেখক এবং কবিদের পৃষ্ঠপোষক ছিলেন। মুসলিম শাসকের আমলে মহাভারত ও রামায়ণসহ হিন্দু ধর্মের অনেক বই বাংলা এবং ফার্সিতে অনুবাদ করা হয়। ইসলাম ধর্মে জ্ঞানার্জনের ব্যাপারে অনেক গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এই ব্যাপারে রাসুল (সাঃ) বলেন, 'যে ব্যক্তি জ্ঞানার্জনের কোন পথ অবলম্বন করে আল্লাহ তার জন্য জান্নাতের পথ সহজ করে দেন।' সবশেষে কুরআনের একটি আয়াত দিয়ে শেষ করতে চাই। আল্লাহ্‌ তা'আলা বলেন, 'যারা জানে আর যারা জানে না তারা উভয় কি সমান হতে পারে?’ [সূরা জুমার, আয়াতঃ ০৯]

Comments

Popular posts from this blog

সমকাম বা হোমোসেক্সুয়াল

বিভিন্ন ধর্মে নারীর পর্দা- তৌহিদ রাসেল

এক নজরে দোহার উপজেলা