গাছ কথা বলে, গাছের এবং ফলের লিঙ্গ আছে।
আমি যেখানে থাকি তার সামনে একটা পেয়ারা গাছ আছে। পেয়ারা বড় হতে না হতেই ঐগুলো অনেকের পাকস্থলীতে চালান হয়ে যায়।
একদিন সকালবেলায় একজন গাছে উঠে পেয়ারা পারতেছিল। অন্য একজন ভাই এটা দেখে বলে উঠলো- 'গাছ যদি কথা বলতে পারতো তাহলে তোমার উপর অভিশাপ দিত।'
ভাইটি কথাটি সিরিয়াসলি বলেনি, জাস্ট মজা করার জন্যই বলেছে। আর এটা যে সে মজা করে বলেছে তা যারা আশেপাশে ছিল তা সবাই বুঝেছে এবং আমিও তাই বুঝেছি। কিন্তু কথা হইলো অন্য জায়গায়।
আমাদের অনেকেরই ধারণা যে, গাছ কথা বলতে পারেন। একসময় আমাদের এটাও ধারণা ছিল যে, গাছের প্রাণ নেই। কিন্তু বিক্রমপুরের বিজ্ঞানী স্যার জগদীশ চন্দ্র বসু প্রমাণ করে দেখিয়েছেন যে গাছেরও প্রাণ আছে।
গাছের প্রাণ আছে এটা জানার পরেও অনেকে জানতই না যে গাছেরও লিঙ্গভেদ আছে। সর্বপ্রথম যে বিজ্ঞানী উদ্ভিদরে মধ্যে পুংলিঙ্গ ও স্ত্রী লিঙ্গ থাকার কথা উল্লেখ করেছেন তিনি হলেন সুইডিশ বিজ্ঞানী কার্ল লিনে। খ্রিষ্টীয় অষ্টাদশ শতকের মাঝামাঝি সময়ে তিনি এ মত প্রকাশ করেন। তার ওই বক্তব্যে অনেকেই বিষ্মিত হয় এবং তারা গীর্জার কর্মকর্তাদেরকে তার বিরুদ্ধে ক্ষেপিয়ে তোলে। ফলে কয়েক বছর ধরে ইউরোপে তার লেখনীকে ভূল মতামত হিসেবে ধরা হত। কিন্তু এর কিছু পরই বিজ্ঞানীরা লিনের মতামতকে সত্য বলে স্বীকৃতি দেন এবং তা একটি বৈজ্ঞানিক মূল নীতি হিসেবে গৃহিত হয়।
বিজ্ঞানের এই আবিষ্কারের আগে কি কেউ এই ব্যাপারে জানতো বা এই ব্যাপারে কোথাও বলা হয়েছিল সেটা ভাবাই যায় না। মজার ব্যাপার হলো এখন থেকে প্রায় ১৪০০ বছর আগে বলা হয়েছিল যে, গাছেরও লিঙ্গ আছে।
কি অবাক হচ্ছেন তাই না! যিনি গাছ সৃষ্টি করেছেন তিনিই জানেন গাছের কি আছে। ১৪০০ বছর আগে পবিত্র কুরআনে আল্লাহ বলেছেন, 'আর তিনি প্রত্যেককে জোড়া জোড়া করে সৃষ্টি করেছেন, তা জমিন থেকে উৎপন্ন উদ্ভিদ হোক, কিংবা তারা স্বয়ং অথবা এমন সৃষ্টি হোক যার সম্বন্ধে তারা এখনো জানেই না।'
[সূরা ইয়াসিন:৩৬]
ফলেরও লিঙ্গ আছে। কি আরো অবাক হচ্ছেন তাই না! বিজ্ঞানীরা দেখিয়েছেন যে, ফল উৎপন্ন হওয়ার আগের স্তর হলো ফুল। ফলের রয়েছে পুরুষ ও স্ত্রী জাতীয় অঙ্গ। পুষ্পরেণু ফুলের মধ্যে এসে পড়লে ফল ধরে, পরিপক্ক হয় এবং বীজ ধারণ করে। দেখা যায়,প্রত্যেক ফলেই পুরুষ ও স্ত্রী লিঙ্গের অস্তিত্ব রয়েছে।
মজার ব্যাপার হলো এই কথাটিও ১৪০০ বছর আগে বলা হয়ে গেছে। আল্লাহ বলেন, 'এবং প্রত্যেক ফলের মধ্যে তিনি দু’প্রকার বা জোড়া সৃষ্টি করেছেন।'
[সূরা রাদঃ০৩]
মূল কথায় ফিরে আসি, গাছ কথা বলতে পারে কি না! কথা বলা মানে এই না যে মানুষ যেসব শব্দ ব্যবহার করে তা ব্যবহার করতে হবে। আবার এটাও না যে অন্য কোনো শব্দ উচ্চারণ করতে হবে। কথা বা ভাষা বিভিন্ন ধরণের হতে পারে। যেমন, শব্দ, সাংকেতিক, রাসায়নিক, প্রতীক বা অন্য কোনো মাধ্যম।
গাছ যদি শব্দ করেও কথা বলে তবুও আমরা শুনব না। কারণ গাছের শব্দ করার কম্পাঙ্ক আমাদের বোধগম্যতার বাইরে। শব্দের কম্পাংক প্রতি সেকেন্ডে ২০ থেকে ২০০০০ এর মধ্যে হলেই কেবল আমরা শব্দ শুনতে পাই। শব্দের কম্পাংকের এই পাল্লাকেই শ্রাব্যতার সীমা বা পাল্লা বলে ।
অনেক বছর ধরে বিজ্ঞানীরা প্রচার করেছেন যে বৃক্ষ থেকে শুরু করে নানা ধরণের গাছপালা তাদের প্রতিবেশীদের সাহায্য করতে বাতাসে অনেক যৌগিক পদার্থ ছড়িয়ে দেয়। এসব রাসায়নিক সতর্কতাগুলোর কারণ, একটি গাছের অসুখের খবর পৌঁছে দেয়া যাতে অন্য গাছপালা তাদের নিজেদেরকে রক্ষা করতে পারে৷
'প্রসিডিংস অফ দি ইন্টারন্যাশনাল একাডেমি অফ সাইন্স'-র জাপানি গবেষকরা কিছু ব্যাখ্যা দিয়েছেন। তারা একটি রাসায়নিক বার্তাকে সনাক্ত করেছেন এবং বার্তাটি এক গাছ থেকে অন্য গাছে পৌঁছান পর্যন্ত একে চিহ্নিত করেছেন৷
গাছ বা অন্য যেকোনো বিষয়ের শব্দ বা কথা বলার ব্যাপারেও সেই ১৪০০ বছর আগেই বলা হয়েছে। সমস্ত সৃষ্টি যেখানেই থাকুক না কেন আল্লাহ তাদের দেখেন এবং তাদের সর্বপ্রকার কথা শ্রবণ করেন। তার দেখার ও শোনার বাইরে কোনো কিছুই নেই।
পবিত্র কুরআনে আল্লাহ বলেছেন, 'আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর অজ্ঞাত বিষয়ের জ্ঞান তারই। তিনি কত সুন্দর দ্রষ্টা ও শ্রোতা।'
[সুরা কাহাফঃ২৬]
Comments
Post a Comment