নীল এবং ঘোর অন্ধকার

নীল এবং ঘোর অন্ধকার

বিকেলে প্রচুর বৃষ্টি হওয়াতে আকাশে চাদ থাকা সত্ত্বেও তেমন আলো ছিল না। মেঘ চাঁদের সামনে দিয়ে খেলা করতে করতে যাচ্ছে। সেদিন টিউশন থেকে ফিরতে নীলের দেরি হয়ে গেল। মোবাইলে চার্জ নেই হাতে ঘড়িও নেই। তবে অনেক রাত হয়ে গেছে সেটা নীল বুঝতে পারলো। রাস্তার পাশে দাড়িয়ে গাড়ির জন্য অপেক্ষা করতেছে। কিন্তু আধ ঘন্টার বেশি হয়ে গেল কোন গাড়ি আসার খবর নেই।

হঠাৎ ঘাড় ঘুরিয়ে দেখে অদ্ভুত ধরনের একটা লোক পাশে দাঁড়ানো। তাকানো মাত্রই লোকটি বলে উঠলো-
"এত রাতে এখানে দাড়িয়ে আছেন কেনো?"
নীল ঐ লোকের অদ্ভুত কন্ঠ শুনে হালকা চমকে উঠলো এবং প্রতি উত্তরে বললো-
"ভার্সিটি যাব কিন্তু গাড়ি পাচ্ছিনা"

লোকটি বললো-
"আজকে রাতে আর গাড়ি পাবেন না। আর এলাকা তেমন ভাল না। তারাতারি কেটে পড়ুন"
নীল খুব ভয় পেয়ে গেল এবং বললো-
"তাহলে আমি এত দুর কিভাবে যাব!"
লোকটি তার হাতের আংগুল দিয়ে ইশারা করে বললেন-
"এই দিক দিয়ে সামনে এগুলে চিতাখোলা আছে। তার ডান রাস্তা দিয়ে চলে যান।"

নীল তার দেখানো পথে হাটা দিলো। অনেক্ষণ হাটার পর চিতাখোলা পেলো। চিতাখোলা থেকে উদ্ভট গন্ধ নাকে ভেসে আসলো। চিতাখোলার পাশে ডান রাস্তা দিয়ে ধান ক্ষেতের আইল দিয়ে হাটা দিলো।

হঠাৎ দেখলো দুর থেকে একটা নিভো নিভো আলো তার দিকে এগিয়ে আসতেছে। এই দৃশ্য দেখে নীলের গা হিম হয়ে গেলো। তবুও নীল হাটার গতি থামালো না। যতই এগুচ্ছে ততই তার গায়ের লোম কাটার মত খাড়া হচ্ছে। এক পর্যায় আলো আর সে মুখোমুখি। দেখা গেলো  একটি লোকের হাতে বিড়ির আগুন।

লোকটি বলে উঠলো -
"এত রাতে এইদিক দিয়ে কই যান?"
নীল চমকে গেলো আরো বেশি। কারন প্রথম ব্যক্তির কন্ঠের সঙ্গে অনেক মিল। তবুও নীল সাহসের সঙ্গে বললো-
"ক্যাম্পাসে যাচ্ছিলাম"

লোকটি বললো-
"ইট ভাটার পর যে পাহাড়ের পাশ দিয়ে যাবেন সেখানে সাবধানে যাবেন। পাহাড়ে খারাপ জিনিস থাকে।"
জ্বী আচ্ছা বলে নীল হাটা দিলো।
কিন্তু ভয়ের পরিমান হাজার গুণ বেড়ে গেলো।

ইট ভাটা পার হবার পর পাহাড়ের রাস্তায় চলে আসলো। হঠাৎ চাদ টা মেঘে ঢেকে গেলো। হালকা গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি পড়া শুরু করলো। কিছুক্ষণ হাটার পর নীল অদ্ভুত শব্দের টের পেলো এবং পিছনে ফিরে তাকিয়ে যা দেখলো তাতে নীলের কলিজা শুকিয়ে কাঠ হয়ে যাচ্ছিলো। এই শীতল আবহাওয়ার মাঝেও তার শরীর থেকে ঘাম বের হতে শুরু করলো।

নীল চোখ বন্ধ করে দৌড়াচ্ছিলো। আর তার কানে সেই শব্দের আওয়াজ টা আরো কাছে আসতে লাগলো। নীল এখন প্রাণ পণ দৌড়াচ্ছে।
দৌড়াচ্ছে আর হাপাচ্ছে হঠাৎ নীল হোচট খেয়ে পড়ে গেল। এই পড়ে যাওয়াটাই নীলের জন্য কাল হয়ে গেলো। নীল শেষ যে দৃশ্য দেখেছিলো তা ভাষায় বর্ণনাতীত।

সকাল হলো, আকাশে কোন মেঘ নেই, সূর্য তীব্রভাবে কিরণ দিচ্ছিলো। সকালে পাহাড়ের পাশের কলোনির লোকজন পাহাড়ে যাওয়ার সময় বিচ্ছিন্নভাবে কিছু হাড়গুড় ও রক্তমাখা ছিঁড়ে ফাটা জামা দেখতে পেলো। সেদিনের পর থেকে ক্যাম্পাসের কেউ আর নীলের দেখা পায়নি।

Comments

Popular posts from this blog

সমকাম বা হোমোসেক্সুয়াল

বিভিন্ন ধর্মে নারীর পর্দা- তৌহিদ রাসেল

এক নজরে দোহার উপজেলা