জেনারেল ছাত্ররা নাকি কুরআন বুঝে না!



ইউরোপে মধ্যযুগে কিছু লোক জান্নাতের টিকিট বিক্রি করতো। টাকা দিয়ে টিকিট কিনলে পাপ মুছে যাবে আর জান্নাত নিশ্চিত হবে। বাংলাদেশে এমন দেখা যায় কি না??

ইউরোপে তখন পোপরা বলতো যে ধর্মগ্রন্থ জনসাধারণ বুঝবে না। ধর্মগ্রন্থ শুধু ধর্মযাজকরাই পড়বে এবং এর মর্ম তারাই বুঝবে। এছাড়াও পোপ বলতো যে স্রষ্টার সাথে সম্পর্ক স্থাপন কারী হলো পোপ। পোপরা ধর্মকে নিজেদের বাপ দাদার সম্পত্তি বানিয়ে নিয়েছিল।

আচ্ছা বাংলাদেশের ধর্মীয় ক্ষেত্রে এমন কিছু লোক আছে কি না যারা বলে যে স্রষ্টার সাথে সম্পর্ক তৈরি করতে হলে অমুক বাবা তমুক বাবাকে ধরতে হবে??

এরপর ধর্মের চরম অবনতির সময় একজন তাদের বিরুদ্ধে দাড়ালো। যে ধর্মতত্ত্ব নিয়ে পড়াশুনা করেছিল। তিনি হলেন মার্টিন লুথার। তিনি বললেন যে এই জান্নাতের টিকিট বিক্রি দুনিয়ার ফায়দা হাসিল হয় পরকালের না। তিনি আরো বললেন যে স্রষ্টার সাথে মানুষ সরাসরি সম্পর্ক তৈরি করতে পারে। পাপ মোচনের জন্য মানুষ সরাসরি স্রষ্টার নিকট ক্ষমাপ্রার্থনা করতে পারে।

মার্টিন লুথার তৎকালীন পোপদের বিভিন্ন মতবাদের বিরোধিতা করে ৯৫ টি থিসিস লাগিয়ে দেয় গির্জার ওয়ালে। তার এই কর্মকাণ্ডে ক্ষিপ্ত হয়ে পোপরা ফতুয়া জারি করলো যে মার্টিন লুথার হলো ফাসেক এবং ধর্মদ্রোহী। জনসাধারণ মার্টিন লুথারের বিপক্ষে চলে গেলো। আচ্ছা বর্তমান বিশ্বে এই রকম কিছু চিত্র ইসলাম ধর্মে দেখা যায় কি না??

এরপর মার্টিন লুথার ধর্মগ্রন্থ নিজ ভাষায় অনুবাদ করে জনসাধারণের কাছে পৌঁছে দিতে লাগলো। শিক্ষিত শ্রেণির যারা যাচাই বাচাই বিচার বিশ্লেষণ করলো তারা মার্টিন লুথারের পক্ষে চলে গেলো। তারা বুঝে গিয়েছিল যে পোপরা নিজেদের অভিসন্ধি হাসিল করতেই মনগড়া ফতুয়া দিয়ে ধর্মগ্রন্থ থেকে জনসাধারণকে দূরে রাখতো। আচ্ছা আমাদের সমাজে এই রকম হয় কি না??

অন্য ধর্মের ইতিহাস টেনে এই জন্যই আনতে হলো যে নিজ ধর্মের কিছু মানুষ আছে যারা পোপদের মত। তাদের নাম সরাসরি উল্লেখ করলে মার্টিন লুথারের মত ফাসেক উপাধি পেতে হবে।

উক্ত ব্যক্তিরা আমাদের কুরআন এবং হাদিস নিজেদের সম্পদ বানিয়ে রেখেছে। আর এমন সব ফতুয়া দেয় যার ফলে জনসাধারণ ধর্মীয়গ্রন্থ পবিত্র অবস্থায়ও পড়তে ইচ্ছুক হয়না। তাদের কমন ফতুয়া টা এই রকম-
'সাধারণ মানুষ কুরআন হাদিস বুঝবো না। তারা পড়লে উল্টাপাল্টা বুঝে পাপ কামাইতে পারে'
এমন কথা শুনা যায় কি না বলেন??

তাদের এহেন ফতুয়ার ফলে কত মানুষ যে হেদায়েত থেকে দূরে সরে আছে তার কোনো ইয়ত্তা নাই। আচ্ছা আমরা মুসলিম হইয়া যদি না বুঝি তাইলে অন্য ধর্মের মানুষ কুরআন হাদিস নিয়া গবেষণা করে মুসলিম হয় কিভাবে??

যদি জেনারেল শিক্ষিত মানুষরা না বুঝে তাইলে ঐ গবেষণা করা লোক গুলা দূরে থেকে আরো দূরে সরে যেত। কারন, তারাও তো জেনারেল শিক্ষিত।

কুরআন শুধু একশ্রেণির লোকের জন্য অবতীর্ণ হয়নি, অবতীর্ণ হয়নি শুধু মাত্র মুসলিমদের জন্য, কুরআন অবতীর্ণ হয়েছে সমস্ত মানব জাতির জন্য। হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান,  সকল জ্বীন ও ইনসানের পড়ার জন্য অবতীর্ণ হইছে। ইসলামে কোনো শ্রেণী বৈষম্য নেই। তাই কুরআন শুধু এক শ্রেণির মানুষ বুঝতে পারবে এই কথারও ভিত্তি নাই।

যদি না পড়ি তাইলে এর মর্মার্থ বুঝবো কিভাবে!! আগে তো পড়তে হবে। কুরআনের  যে আয়াত টা প্রথম নাজিল হয় তার প্রথম শব্দ টা ছিল ইকরা অর্থাৎ পড়ো।

আল্লাহ আমাদের পড়তে বলেছেন। দুনিয়ার সমস্ত জ্বীন ইনসান কে পড়তে বলেছেন। একটি নির্দিষ্ট শ্রেণিকে না। তাই সেই সব ব্যক্তিদের নিকট আকুল আবেদন যে, এমন ফতুয়া দিবেন না যার ফলে মানুষ কুরআনের মর্মার্থ বুঝা থেকে দূরে সরে গিয়ে হেদায়েত থেকে বঞ্চিত হয়।

Comments

Popular posts from this blog

সমকাম বা হোমোসেক্সুয়াল

বিভিন্ন ধর্মে নারীর পর্দা- তৌহিদ রাসেল

এক নজরে দোহার উপজেলা