পাবলিক, ন্যাশনাল, প্রাইভেট ভার্সিটি এবং চাকরি।



ঢাকায় একটা মেসে থাকতাম আমরা চারবন্ধু। বুয়া অসুস্থ থাকায় দুই দিন আসতে পারেনি। তাই আমাদের হোটেলে খাওয়া দাওয়া করতে হইছিলো।

প্রতি বেলায় সবজি আর ডাল দিয়া খাইছি তবুও একেকজনের বিল ১০০ টাকার উপরে হইছিলো। তখন রাতে আমরা গল্প করলাম জীবনে কে কি করব যদি পাবলিক ভার্সিটিতে চান্স না পাই। একেকজন একেকটা মত দিলো। কিন্তু একজন বললো ভাতের ব্যবসা করব। সবাই ওর মতামতে এক কথায় রাজি হয়ে গেলাম।

ভার্সিটি গুলিতে পরীক্ষা দিলাম একেকজন একেক জায়াগায় ভর্তি হলাম। দুরত্ব বেড়ে গেলো আমাদের সবাইর মাঝে। যে টান টান উত্তেজনা ছিল কিছু করা নিয়ে সেটা মাটির সাথে মিশে গেলো।  কেউ হতাশ পাবলিকে চান্স না পাওয়ায়, কেউ হতাশ মন মত সাবজেক্ট না পাওয়ায়।

একজন অনেক যায়গায় চান্স পায়,আবার অনেকে কোথাও চান্স পায় না। জীবনে ভাল কিছু করা বা সফল হওয়ার জন্য এটাই একমাত্র পন্থা না। আমরা প্রায় সবাই বলি যে ভর্তি পরীক্ষা হল জীবনের টার্নিং পয়েন্ট। এখানে ভাল করতে পারলে জীবনটাই বদলে যাবে। হয়তো আমিও বলি। তার মানে এই না যে এটাই জীবন। ভার্সিটি ভর্তি পরীক্ষায় না টিকলে জীবন থেমে যাবে, আপাত দৃষ্টিতে হয়তো এমনটা মনে হয়। তবে এখানে চান্স পাওয়াই সবকিছু না।

আমি মোটিভেটেড করার কেউ নই। এই মোটিভেশন টা আমার নিজেরই আগে দরকার। আরো বেশি মোটিভেশন পেতে চাইলে গুগলে সার্চ দিতে পারেন এবং বাজার থেকে ইন্সপাইরেশন ও মোটিভেশনের উপর লেখা বই কিনতে পারেন।

জীবনের মূল যুদ্ধ শুরু হয় অনার্স মাস্টার্সের পর থেকে। আপনি পাবলিক না ন্যাশনাল নাকি প্রাইভেট থেকে পাস করেছেন সেটা ফ্যাক্ট না। ফ্যাক্ট হলো আপনি প্রফেশনাল লাইফের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করেছেন কি না!

নিজেকে প্রস্তুত করার জন্য যা যা লাগবে তা একটু বলা যাক। স্বাস্থ্যকে গুরুত্ব দিতে হবে। শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য দুটোই গুরুত্বপূর্ণ। স্বাস্থ্যের সঙ্গে কিন্তু আমাদের অভ্যাসগুলো জড়িত। খুব সহজে বদভ্যাসে জড়িয়ে পড়া যায়, সুঅভ্যাসের জন্য সময় দিতে হয়।

সৃজনশীলতার বিকাশে নজর দিতে হবে। নেতিবাচক মানুষ ও পরিবেশ এড়িয়ে চলতে হবে। ভবিষ্যৎ কিংবা অতীত বলে তেমন কিছু নেই, বিষয়টি আপেক্ষিক। সাফল্যের জন্য আপনাকে আজ কাজ করতে হবে। মানুষ হিসেবে আমরা সবাই সবকিছু জানি না। জানার জন্য বই পড়তে হবে। ফিকশন, নন-ফিকশন সব ধরনের বই পড়তে হবে।

বুদ্ধিবৃত্তিক কিংবা সৃজনশীল যেকোনো সুযোগ মিললে হ্যাঁ বলুন। আনন্দ কিংবা মনন বিকাশ হতে পারে এমন কাজকে সব সময়ই হ্যাঁ বলা শিখুন। কোনো বিষয় ভয় হিসেবে মনে করলে আজীবনই তা আপনার জন্য জড়তা। ভয় কাটিয়ে জড়তা এড়িয়ে সামনে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করুন।

অনেকে বলে, আমিতো ন্যাশনালে পড়ি, প্রাইভেট ভার্সিটিতে পড়ি, তাহলে আমি কিভাবে সরকারি জব পাবো? সরকারি জব তো সব পাবলিক ভার্সিটির স্টুডেন্টরা পাবে।

ভাই এটা একটা ভুল ধারণা। পাবলিক ভার্সিটির স্টুডেন্টরা কি অবস্থায় আছে সেটা তা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে। বিসিএস এবং সরকারি জব পাওয়ার জন্য আপনাকে পাবলিক ভার্সিটির স্টুডেন্ট হতে হবে না। আপনাকে কিছু প্রক্রিয়া অবলম্বন করতে হবে। যা যা করতে হবে তা লিখে রাখুন একটি খাতায়। গুগলে সার্চ দিলে এর চেয়েও আরো ভালো পরামর্শ পাবেন।

বাংলা ব্যাকরণের জন্য নবম-দশম শ্রেণির ব্যকরণ মূল বই এবং বাংলা সাহিত্যের জন্য Mp3 বাংলা গাইড।

ইংরেজি গ্রামারের জন্য পিসি দাসের Aplied English Grammer, চৌধুরি এন্ড হোসাইন এর Advanced English Learners (class 9-10), ক্লিফসের TOEFL। কম্পিটিভ এক্সাম বইটি প্র্যাকটিস করতে পারেন।

ভোকাবুলারির যেকোন বই পড়তে পারেন প্রফেসরস ভোকাবুলারি ট্রেজারার, সাইফুরস ভোকাবুলারি, একটু অগ্রসর হলে ক্লিফসের GRE ভোকাবুলারি।

ইংরেজি সাহিত্যের ক্ষেত্রে আমান এন্ড শিপনের ইজি এপ্রোচ ইংলিশ লিটারেচার অথবা প্রফেসর লিটারেচার গাইড।

বাংলাদেশ বিষয়াবলীর উপর  ভালভাবে  দখল নিতে ক্যারিয়ার এইড, একটু অগ্রসর হলে ৯ম-১০ম শ্রেণির মানবিকের বই যেমন, ইতিহাস, পৌরনীতি, অর্থনীতি, উচ্চমাধ্যমিক পৌরনীতি দ্বিতীয়পত্র।

আন্তজার্তিক বিষয়াবলী : ওরাকল গাইড, তারেক শামসুর রহমান স্যারের বিশ্ব রাজনীতির ১০০ বছর। আন্তজার্তিক সম্পর্কের মূলনীতি। পাশাপাশি Mp3 আন্তর্জাতিক।

ভূগোল, মানসিক দক্ষতা, নৈতিকতা সুশাসনের ক্ষেত্রে বাজারের যেকোন গাইড থেকেই অনেকটা প্রস্তুতি হয়ে যাবে।

কম্পিউটার প্রযুক্তির জন্য একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বইটি পড়ুন।

বিজ্ঞানের জন্য ওরাকলের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, MP3 বিজ্ঞান গাইড, নবম-দশম শ্রেণির সাধারণ বিজ্ঞান মূল বই।

গণিতের জন্য  ম্যাথ রিভিও সহ বিভিন্ন প্রকাশনীর গণিত গাইড। তবে ব্যাংকের জন্য আরো পড়তে হবে। বেসিক ম্যাথ লেভেল স্ট্রং করতে ৮ম, ৯ম-১০ম শ্রেনির মূল বই থেকে পার্টিগণিত, পরিমিতি, বীজগণিত ইত্যাদি পড়তে হবে।

সরকারি চাকরির জন্য পড়া শুরুর আগে কি রকম প্রশ্ন হবে তা ধারণা নেওয়ার জন্য প্রশ্ন ব্যাংক গাইড টা কিনতে পারেন।

নিয়মিত ইংরেজি এবং বাংলা পত্রিকা অবশ্যই পড়তে হবে। উপরের বই গুলা কিনে রাখলেই হবেনা, পড়তে হবে, বুঝতে হবে এবং মুখস্থ করে ফেলতে হবে। পড়া ছাড়া সরকারি চাকরি পাওয়া সম্ভব না।

বিসিএস এবং সরকারি চাকরির প্রতি স্টুডেন্টদের এত ঝোক থাকে যে সব লাইনের স্টুডেন্ট এক লাইনে প্রতিযোগিতা শুরু করে। ফলে যা হওয়ার তা হয়, লেগে যায় সরকারি চাকরীর জায়গায় বিশাল জ্যাম। যারা সফল হয় তারা আকাশের চাঁদ হাতে পায়, আর যারা ব্যর্থ হয় তারা ছ্যাকাখোর প্রেমিকের মত ভাবলেশহীন হয়ে পড়ে।

মনে রাখবেন সরকারি চাকরিই সব না। অনেক বড় বড় চাকরি পড়ে আছে প্রাইভেট সেক্টরে যেখানে আপনার মত লোক তাদের খুব প্রয়োজন। আমার পরিচিত দুজন ভাই আছে। তারা সরকারি চাকরির প্রিপারেশন না নিয়ে প্রাইভেট জবের জন্য প্রিপারেশন নিয়ে ছিল। একজন এখন বেতন পায় ৭০ হাজারের উপরে। আর তার বড় এক ভাই পায় ১ লাখ টাকার উপরে।

প্রাইভেট জবে একাডেমিক ব্যাকগ্রাউন্ডের পাশাপাশি মোটাদাগে দেখা হয় আবেদনকারীর নেতৃত্ব গুণাগুণ, কমিটমেন্ট, বুদ্ধিমত্তা, দূরদৃষ্টি, সৃজনশীলতা, দায়িত্ববোধ, সততা, ফাংশনাল নলেজ, সর্বোপরি আসলেই তিনি কাজটির জন্য উপযুক্ত কি না।

ফ্রেশ গ্রাজুয়েটদের নিয়োগের ক্ষেত্রে তাদের স্মার্টনেস, যোগাযোগ দক্ষতা, অ্যাম্বিশন, নিয়োগদাতা প্রতিষ্ঠানে কাজ করার আগ্রহ, এক্সট্রা কারিকুলার ও ভলেনটারি অ্যাক্টিভিটিজ আছে কিনা, প্রেজেন্স অব মাইন্ড এসব বিষয় খতিয়ে দেখা হয়।

মনে রাখা উচিৎ প্রাইভেট সেক্টরে সবচেয়ে যে দুইটা জিনিসে বেশি গুরুত্ব দেয় তা হলো আপনার কম্পিউটার স্কিল এবং ইংলিশ স্পোকেন স্কিল। পাশাপাশি আর দুই একটা ভাষায় দখল থাকলে তাহলে তো কোনো কথাই নেই।

প্রাইভেট জবে আবেদন করার সময় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয় আপনার বায়োডাটা। কারণ, চাকরিদাতার কাছে সেটাই আপনার ফাস্ট ইম্প্রেশন। অতএব, নিজের বায়োডাটাটি ভালোভাবে তৈরি করে রাখুন। ইন্টারনেট ঘাঁটলেই পেয়ে যাবেন ভালো সিভি তৈরি করার অনেক উপায়। তা থেকে বেছে নিয়ে যুগোপযোগী একটি বায়োডাটা তৈরী করে।

ভালো ভালো নামীদামী ভার্সিটি থেকে অনার্স মাস্টার্স শেষ করে বসে আছেন কিন্তু চাকরি পাচ্ছেন না। তাহলে অলস ভাবে বসে না থেকে আত্মকর্মসংস্থান তৈরি করতে পারেন। জানি আমাদের অনেকেরই এটা প্রেস্টিজে লাগে। কিন্তু বেকার থাকার চেয়ে আত্মকর্মসংস্থান হাজার গুন ভাল। সামথিং ইজ বেটার দ্যান নাথিং। আর আত্মকর্মসংস্থান সম্মানের একটা বিষয়। আপনি কারো অধীনে চাকরি না করে উল্টো মানুষকে চাকরি দিতে পারবেন।

কৃষিকাজ, মৎস্যচাষ, খামার তৈরি, দোকানদারি, ফ্রিল্যান্সিং ইত্যাদি অনেক আত্মকর্মসংস্থান আছে। তাই অযথা বসে না থেকে নেমে পড়ুন যেকোনো একটিতে।

অনেকেই আছে বলে যে কাজ সরকারের দেওয়া দরকার। যদি আপনার দক্ষতা আর যোগ্যতা না থাকে তাহলে সরকার কিভাবে কাজ দিবে?? আর এই বিষয়ে শর্টকাট ইন্সপাইরেশন পাইতে ভিডিওটা দেখুন।
     http://bit.do/tnrs 

ঝেড়ে ফেলুন চিন্তা, বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে দিন অলসতাকে। আর মন থেকে বলুন, ভার্সিটি ইজ নট ফ্যাক্ট, ইট'স টাইম টু ডু দ্য এ্যাক্ট।

Comments

  1. Goyang Casino: Enjoy the excitement of a gaming escape
    Goyang Casino 인싸포커 is one of the newest online gambling portals with 포커 마운틴 lots of 블랙 잭 ways to play, so make sure 뭐 먹지 룰렛 you 블랙잭만화 check back with Goyang

    ReplyDelete

Post a Comment

Popular posts from this blog

সমকাম বা হোমোসেক্সুয়াল

বিভিন্ন ধর্মে নারীর পর্দা- তৌহিদ রাসেল

এক নজরে দোহার উপজেলা