পরীক্ষার আগে প্রস্তুতি এবং পরীক্ষার সময় করণীয়


একজন শ্রমিকের কাজ কি?

সে সারাদিন মাটি কাটবে অথবা রিক্সা চালিয়ে দিন শেষে কিছু টাকা পাবে। তাতেই সেই দিন এনে দিনে খেয়ে কোন মত সংসার পার করে দিবে।

আচ্ছা আপনি কি কখনো দিনমজুরের মত কাজ করেছেন!!
করলে বুঝবেন কষ্ট কাকে বলে। আপনি আমি অনেক হাজার গুন শান্তিতে আছি। বাবা মা কষ্ট করে টাকা পাঠায়। আমরা আনন্দ উল্লাসে খরচ  করি। আর পড়ার টেবিলে বসলেই ভাবি কি পড়ালেখা অনেক কষ্ট।

আপনি মাসে ছয় হাজার টাকা খরচ করলে প্রতিদিন দুইশো টাকা খরচ করতেছেন। আপনি আমি কতটুকু কষ্ট করেছি?
আর এক্সাম আসলে তো কথাই নেই। আরে ভাই ঐ খেটে খাওয়া মানুষের মত আমরা দশ ভাগের এক কষ্ট পর্যন্ত করিনা।

এখনো আপনার আমার সময় আছে পিছনের নষ্ট করা সময় গুলি ভুলে ঐ কষ্টে ক্লিষ্ট মানুষ গুলির কথা স্মরন করে নতুন ভাবে শুরু করি পড়াশোনা। সময় এখনো  শেষ হয়ে যাইনি।



যে সমস্যার কারনে আমাদের মাথার ভিতর হযবরল চিন্তায় সব কিছু এলো মেলো হয়ে যায় তার ভিতর উল্লেখ্যযোগ্য কারনটি হলো- 'কি পড়তে হবে তা নির্দিষ্ট করা নিয়ে।'

সারা বছর যা পড়েছি তা হলো জ্ঞানার্জন। পরীক্ষার জন্য পরীক্ষার সময় এত পড়ার দরকার নেই। সহজ উপায় হলো ৫ টা প্রশ্ন কমন  করার জন্য মার্ক করে ৮-১০ টা প্রশ্ন পড়ে যদি হুবহু তিন টা প্রশ্ন কমন পড়ে, তাহলে গাধার মত এত প্রশ্ন পড়ে মাথা নষ্ট করার তো কোন মানে নেই। তবে সিলেবাসের সকল পড়া একবার রিভাইস দেওয়া উচিৎ।

বুদ্ধিমানরা পরীক্ষার সময় শর্ট সাজেশন পড়ে সব থেকে ভাল রেজাল্ট করে।

এত চিন্তা ভাবনার কিছু নেই,
আরে ভাই যা পারিস তাই কম কম করে ভাল মত পড়।  আর কমন না পড়লে বানাইয়া লেখার অভ্যাস গড়।



অনার্স পরীক্ষার সময় হলো ৪ ঘন্টা। আর কলেজ ও হাই স্কুলের পরীক্ষার সময় ৩ ঘন্টা অনেকে ভাবে যে এত সময় ধরে কি লিখবো!

যখন এক্সাম টাইম শেষের দিকে চলে আসবে তখন বুঝবেন ৪ বা ৩ ঘন্টা কিছুই না। যদি আরো ১০ মিনিট সময় পেতাম তাহলে লাস্ট প্রশ্নটা ভালভাবে লিখতে পারতাম।

তাই সচেতন হতে হলে আগে থেকেই সচেতন হোন। প্রথম প্রশ্নে সময় বেশি নিন। বাকি প্রশ্ন গুলি গড় করে প্রতি প্রশ্নে সময় ফিক্সড করুন। লাস্ট প্রশ্ন টি সময় দেখে গুছিয়ে লিখে শেষ করুন।

আর নার্ভাস হওয়ার কিছু নেই। পরীক্ষার হলে আপনার আমার মত সবাইর একই প্রোবলেম। তাই চিন্তা ভাবনা না করে ঠিক মত এক্সাম গুলি শেষ করুন। ইনশাল্লাহ ভাল রেজাল্ট হবে।

পরীক্ষার আগের রাতে কি করতে হবে তা নির্দিষ্ট করে বলার কিছু নেই।

তবে এই টুকু বলা যে, সন্ধ্যার পর পেটে কিছু দিয়ে মোবাইল অফ করে টানা ঘুম আসা অবধি পড়ে যাও।

বেশি পড়ার দরকার নাই, পিছনে যা পড়া হয়েছে তা শুধু বার বার চোখ বুলিয়ে যাওয়া। আর যারা আগে পড়েনি তারা আমার মত নাকে তেল দিয়ে একবার পুরো বইটা পড়ে ঘুমিয়ে যাও।



এক্সামের আগে যত সমস্যা দেখা দেয় তার ভিতর অন্যতম হলো-
* বাবা-মায়ের কথা কাটাকাটি।
* মোবাইলে প্রিয়জনের ঘন ঘন মেসেজ।
* বন্ধুদের সাথে চা খেতে যাওয়া।
* ফেইসবুকে ঘন ঘন টু মারা।

এসব কারনে পড়াশোনা তে মন তেমন তো বসেই না, উল্টা পড়াশোনা আগে যা শিখা হয়েছিলো তা হযবরল হয়ে যায়।

তাই এসব ঝামেলা থেকে নিজেকে সম্পূর্ণ মুক্ত রাখার সহজ উপায় হলো মোবাইল অফ রাখা। আর বাবা মাকে বার বার বলা যে গুরুত্বপূর্ণ এক্সাম হচ্ছে অথবা চলে যান এমন কোনো জায়গায় যেখানে আপনার ডিস্টার্ব করার কেউ নেই।

মনে রাখবেন, পরীক্ষাই পারে একজন ছাত্রের জীবন পাল্টে দিতে।

পরীক্ষার সময় সব চেয়ে কমন ব্যাপার হলো মাথা ব্যাথা উঠা অথবা মাথা ঘুরানো। এর থেকে মুক্তি পাওয়ার উপায় হলো-
১। পরীক্ষার আগের রাতে তারাতারি ঘুমাতে হবে।
২। সকালে প্রোটিনযুক্ত খাবার খেতে হবে।
৩। এক্সাম হলে ঢুকার আগে কড়া লিকার দিয়ে এক কাপ চা পান করতে হবে।

গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো পরীক্ষার সময় ভিটামিনের অভাব দেখা দেয় এবং স্নায়ু দুর্বল হয়ে যায়। তাই ডাক্তারের পরামর্শে কিছু ওষুধ খাওয়া যেতে পারে।



ঝংকার মাহবুবের সাথে তাল মিলিয়ে বলা যায়-
'এই তুমিই কোচিং সেন্টারে, স্যারের বাসাতে, স্কুলের পরীক্ষাতে, এমনকি প্রাইভেট টিউটরের সামনে দাপিয়ে বেড়াতে।
সেই তুমিই এখন ক্লাসের লাস্ট বেঞ্চে বসে মাথা লুকিয়ে রাখো, টিচারদের দৃষ্টি এড়াতে।

যেই তুমি চেয়ার-টেবিলে বসলেই, কোচিংয়ে ভাইয়ার লেকচার শুনলেই, পড়ালেখা হয়ে যেতো। সেই তুমিই নিয়মিত ক্লাসে গিয়ে, এসাইনমেন্ট-ল্যাবের রিপোর্ট ঠিক সময়ে জমা দিয়েও, এক লাইনও মাথায় ঢুকাতে পারো না।

কেনো পারো না? কারণ, তুমি ভার্সিটিতে যাও,  শিখার চেষ্টা করো না। বাসায় এসে পড়, স্টাডি করো না।  এসাইনমেন্ট জমা দাও, নাম্বার পাওয়ার কম্পিটিশন করো না।  ক্লাসে যাও, পড়া বুঝে নেওয়ার আগ্রহ দেখাও না।

আড্ডা মারো, ট্যুর দাও, ক্লাস লেকচার নিয়ে আলোচনা করো না।  দুই নাম্বার কম পাইলে,  হু কেয়ারস, নাম্বার ডাজেন্ট মেটার বলে বেনসন ধরাও, টপকে যাওয়ার চ্যালেঞ্জ নাও না।  তাই "পরীক্ষার আগের দিন রাতে, বুঝে না বুঝে আপলোড করো মাথায়,  ডাউন-লোড করো পরীক্ষার খাতায়"।

তোমাকে স্টাডি করতে হবে- মুভি দেখা, খেলা দেখার স্টাইলে। মুভি দেখার মতো, চোখ থাকবে বইয়ের পাতার দিকে। মাথার চিন্তা থাকবে- পড়া লজিক্যালি কোন জায়গা থেকে কোন জায়গায় যাচ্ছে সেটা চিন্তা করতে।

ইমোশন এবং ফিলিংস থাকবে,  পড়া অগ্রসর হওয়া, বুঝতে পারা, শেষ হওয়ার দিকে। পড়ালেখার জন্য ইমোশন, আবেগ,  ক্রেজ না থাকলে- দুই মিনিট পরেই ভাল্লাগেনা ভাবতে,  মোবাইল ধরতে,  ফেইসবুক খুলতে মন আকুপাকু করবে।

আর পড়া মনে রাখতে হবে প্রিয় গানের লিরিক্স মনে রাখার স্টাইলে।  দুই-একবার শুনলে দুনিয়ার কারোরই গানের লিরিক্স মনে থাকবে না।  তাই বারবার শুনতে হয়।

একইভাবে একবার পড়লে পড়া কারোরই মনে থাকবে না। বারবার পড়ে,  স্টাডি করতে হয়। প্রথমবার পড়ে চ্যাপ্টারে সম্পর্কে আইডিয়া নিবা। পরেরবার আরেকটু বুঝার চেষ্টা করবা, ড্রয়িং থাকলে আঁকবা, পরীক্ষার খাতায় লিখার মতো করে লিখবা,  রাতে বিছানায় শুয়ে চোখ বন্ধ করে রিভাইজ দিবা।

খিধা লাগার পরে, খাইতে না পারলে যেমন চটপট করতে থাকো।  দিনের পড়া দিনে শেষ করতে না পারলে সেই লেভেলের চটপট করতে হবে। পড়ালেখাকে জীবনের অপরিহার্য অংশ বানাতে হবে। তখন পড়ালেখার ভালো পরিবেশ থাকুক বা না থাকুক, সাবজেক্ট কঠিন হোক বা বায়বীয় হোক,  তুমি ঠিকই হায়েস্ট নাম্বার পাবে।

গার্লফ্রেন্ড অন্য ছেলের প্রোফাইল পিকচারে লাইক দিলেও তুমি ভরের নিত্যতার সূত্র ছন্দ করে পড়তে থাকবে।  নিজেই নিজেকে ডেডলাইন দিয়ে পড়া শেষ করবে।  নিজে নিজেই মডেল টেস্ট, মক টেস্ট দিবে।

কিছুক্ষণ বসে বসে পড়তে ভালো না লাগলে, হেটে হেটে পড়বে,  জায়গা চেইঞ্জ করে
পড়বে।  বাসে, বাথরুমে, দুই ক্লাসের গ্যাপে, এমনকি বই না থাকলে মনে মনে রিভাইজ দিবে।

এইটাকে বলে স্টাডি।
এইটাকে বলে ক্রেজি।
এইটাকে বলে আতলামি।
এই আতলামি একটা সিরিয়াস নেশা।

এই নেশার জগতে ঢুকতে পারলে ডিপার্টমেন্টের টিচার হওয়া, প্রেসিডেন্ট থেকে গোল্ড মেডেল নেওয়া, ফুল-ব্রাইট স্কলারশিপ পাওয়া, এমনকি জুনিয়র ব্যাচের সুন্দরীর ভালবাসা, কোনটাই কোন ব্যাপার না।'



পরীক্ষার হলে যেটা সব চেয়ে বিরক্তি কর ব্যাপার তা হলো-

→ টিচারের ফোন বেজে উঠা।
→ ফোনে উচ্চস্বরে কথা বলা।
→ দুই জন টিচার চুটিয়ে খোশ গল্প করা।
→ ইয়াং পুরুষ টিচার আর ইয়াং লেডি টিচারের হাসি তামাশা।
→ ছাত্ররা অতিরিক্ত খাতা চাইতে গেলে খাতা চাওয়ার স্টাইল শিখিয়ে দেওয়া।
→ বাহিরে যেতে চাইলে টিচারের নেতিবাচক মন্তব্য।

এইগুলির ফলে প্রতিটি স্টুডেন্ট কি পরিমান ক্ষতি গ্রস্থ হচ্ছে তা টিচাররা একটুও চিন্তা করে দেখেন না।

এক্সাম হলে স্টুডেন্ট দের জন্য যেমন নিয়ম আছে টিচারদের জন্যও তেমন বাধা ধরা নিয়ম থাকা উচিৎ।



এক্সামের জন্য পড়ার সময় আমরা রিলাক্স থাকার জন্য গান শুনি বা দেখি, অনেকে নাটক বা ফিল্ম দেখে পড়াশোনার ফাকে ফাকে। আমরা ভাবি এসব জিনিসে মাইন্ড ফ্রেশ হয়।

কিন্তু সম্পূর্ণ ভুল ধারনা এটা। আমরা গান, নাটক, ফিল্ম দেখে ইমোশনাল হয়ে যাই। যার ফলে এক্সামের পড়ায় উদাসীনতা ভাব চলে আসে যা  আমরা সহজে বুঝতেই পারিনা।

তার চেয়ে মূল কথা হলো আমাদের
সময় অপচয় হয়। যেমন একটা গান শুনলে আর একটা গান শুনতে মনে চায়। এভাবেই ধীরে ধীরে সময় চলে যায়। শেষ  কাটালে ফলাফল শূণ্যের কুঠায়। আমি যে এর জ্বলন্ত প্রমান।



যারা এইচএসসি এক্সাম দিবেন তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।

ইন্টার এক্সাম দেওয়ার পর আমাদের বেশির ভাগ স্টুডেন্টদের স্বপ্ন থাকে পাবলিক ভার্সিটিতে চান্স পাওয়া। আমি মনে করে এটা অসম্ভব কিছুনা। যে চাইবে সেই পারবে।

তবে কিছু নির্দেশনা মেনে চলতে হবে। সবচেয়ে অন্যতম নির্দেশনা হলো এই চার মাস কোচিং করার সময় বা বাড়িতে স্টাডি করার সময় সম্পূর্ণ মোবাইল থেকে দুরে থাকতে হবে। শুধু মাত্র জরুরি যোগাযোগ অথবা ইন্টারনেটে তথ্য সংগ্রহ এবং ডিকশনারি ব্যবহার করার জন্য সাময়িক সময়ের জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে।

অন্যথায় কোন রকম ভাবে মোবাইল টাচ করা থেকে বিরত থাকুন। যেমনঃ

→ ফেইসবুক,  ইমু, ভাইবার, হোয়াটস্যাপ, অন্যান্য সোশ্যাল সাইটে মেসেজ চ্যাটিং
→ জিএফ বা বিএফ এর সাথে ফোনে কথা বলা
→ গান শোনা, মুভি দেখা
→ মোবাইলে বা ল্যাপটপে গেইম খেলা ইত্যাদি জিনিস হতে নিজেকে বিরত রাখুন।

যদি আপনি এই গুলা থেকে নিজেকে গুছিয়ে নিতে পারেন তাহলে আমি চ্যালেঞ্জ করছি ইনশাআল্লাহ আপনি বাংলাদেশের অনেক ভাল ভাল পাবলিক ভার্সিটি তে চান্স পাবেন।



সামনে পরীক্ষা অথবা পরীক্ষা চলতেছে কিন্তু পড়ায় মন বসতেছে না!!

সবকিছুরই সমাধান হবে যদি আপনি নিজেকে নিম্নোক্ত বিষয়ের সাথে নিজেকে খাপ খাইয়ে নিতে পারেন।

সে জন্য আপনাকে যা করতে হবেঃ
→ প্রথমে মোবাইল ল্যাপটপ অফ করতে হবে
→ চা/কফি খেয়ে নিতে হবে
→ রুম বন্ধ করে পড়তে বসুন
→ কলম খাতা নিয়ে লিখুন যা মুখস্থ করতেছেন সেগুলার পয়েন্ট।
→ প্রেম-ভালবাসা পরীক্ষা চলাকালীন সময় বন্ধ রাখুন।

এছাড়াও আরো কিছু বিষয় আছে যা আপনি নিজে ভাল বুঝবেন। আর একটা বিষয় এত পড়া কিভাবে পড়ব এই চিন্তা ভুলেও মাথায় আনবেন না। একটা একটা করে প্রশ্ন পড়া শুরু করুন। দেখবেন যে সব প্রশ্ন কখন শেষ হইছে তা ভাবতেও পারবেন না।

ফেইসবুক না গুতাইয়া কষ্ট করে একটু টেক্সটবুক গুতান।

স্রষ্টা প্রদত্ত মেধা বলতে  আমাদের মস্তিষ্ক।
যে যত বেশি পড়বে সে তত বেশি মেধাবী হবে।

Comments

Popular posts from this blog

সমকাম বা হোমোসেক্সুয়াল

বিভিন্ন ধর্মে নারীর পর্দা- তৌহিদ রাসেল

এক নজরে দোহার উপজেলা